২০০৭ সালে আইফোন (iPhone) প্রকাশের পর থেকে এর প্রতিষ্ঠাতা Apple Inc. মোবাইল ডিভাইসের ধারণাই পাল্টে দেয়। এর সাবলীল টাচ ইন্টারফেস, দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন এবং ২০০ টির অধিক প্যাটেন্টকৃত আকর্ষণীয় সব ফিচারের কল্যাণে সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়। ফলাফল হিসেবে গত সাড়ে তিন বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি আইফোন বিক্রি হয়েছে। আইফোনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি একাই লাভবান হয় নি, পাশাপাশি প্রোগ্রামার আর ডিজাইনারদের জন্য তৈরি করে দিয়েছে iTunes App Store নামক এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের এক বিশাল বাজার। ২০০৮ সালে স্টোরটি চালু হবার পর আজ অবধি ২ লক্ষের উপর আইফোনের এপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে। এই ভার্চুয়াল স্টোরটিতে বিভিন্ন ধরনের দরকারী, শিক্ষণীয়, মজাদার সফটওয়্যার আর আকর্ষণীয় গেম বিনামূল্যে বা প্রায় নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যায়। ফলে এর ব্যবহারকারীদের কাছে এই সকল এপ্লিকেশনের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
স্টিভ ডেমেটার যুক্তরাষ্ট্রে সানফ্রান্সিসকোতে বসবাসরত একজন প্রোগ্রমার। তিনি মূল চাকুরীর বাইরে অতিরিক্ত প্রজেক্ট হিসেবে আইফোনের জন্য Trism নামক একটি পাজল গেম তৈরি করেছিলেন। আর এখন তিনি তার চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ হচ্ছে ৪.৯৯ ডলার দামের এই ছোট গেমটি মাত্র দুই মাস বিক্রি করে তার তার আয় হয়েছে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ডলার। স্টিভ বর্তমানে কয়েকজন ডেভেলপার এবং ডিজাইনার রেখে পুরো মাত্রায় আইফোনের জন্য গেম তৈরি করছেন।
রাতারাতি সাফল্য পাওয়া দৃষ্টান্ত হচ্ছে iShoot নামক আরেকটি গেম। এটি একটি ট্যাংক যুদ্ধের গেম। ডেভেলপার ইথান নিকোলাস জানান তিনি সান মাইক্রোসিস্টেমে চাকুরী করতেন। অবসর সময়ে শখের বশে গেমটি তৈরি করেছিলেন এবং রিলিজ করার পর গেমটিতে আর কোন আপডেট আনেননি। ২.৯৯ ডলার দামের গেমটি প্রকাশের পর মোটামুটি কয়েকবার বিক্রি হয়েছিল যা ইথানের দৃষ্টিতে ছিল স্বাভাবিক। ক্রিসমাসের বন্ধে গেমটির একটি ফ্রি ভার্সন ছাড়ার পরিকল্পনা করেন, আশা ছিল আইফোনের গেমারদের কাছে গেমটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এই সিদ্ধান্তটিই তার ভাগ্য পরিবর্তনে ম্যাজিকের মত কাজ দেয়। ফ্রি ভার্সনটি ছাড়ার দশ দিনের মধ্যে মূল গেমটি একদিনে প্রায় ১৭ হাজার বার বিক্রি হয়ে iTunes App Store এর শীর্ষে চলে আসে। প্রতিবার বিক্রির জন্য Apple কে ৩০% কমিশন দেবার পর একদিনে তার আয় দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ডলারের উপর। একমাস পরে দেখা যায় গেমটি মোট ৩ লক্ষ বার বিক্রি হয়, যা থেকে তার আয় হয় ৬ লক্ষ ডলারের উপর। অন্যদিকে ফ্রি ভার্সনটি একই মাসে ২৪ লক্ষ বার ডাউনলোড হয়। ইথান জানান গেমটি তার তৈরি প্রথম আইফোন এপ্লিকেশন। এটি তৈরির পূর্বে আগে কখনও আইফোনের প্রোগ্রামিং ভাষা Objective-C তে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। গেমটির আইডিয়া অত্যন্ত সাধারণ, নিজের ট্যাংককে প্রতিরক্ষা করা এবং শত্রুর ট্যাংককে ধ্বংস করা। ফ্রি ভার্সনটিতে ৬ ধরনের অস্ত্র রয়েছে, অন্যদিকে মূল ভার্সনে রয়েছে ২০ টি অস্ত্র। ইথান আরো জানান গেমটি তৈরির পর এর প্রচারের জন্য তিনি কোন টাকা খরচ করেননি, এমনকি কোন ব্লগে রিভিউ পর্যন্ত লিখেননি। তিনি এমন একটি গেম তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা তিনি নিজে অবসর সময়ে খেলবেন। বর্তমানে ইথান নিকোলাস তার চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন, এবার তিনি গুরুত্বের সাথে আইফোনের জন্য গেম তৈরি শুরু করছেন।
প্রকৃতপক্ষে সবার হয়ত রাতারাতি কোটিপতি হবার সৌভাগ্য হবে না। তবে একথা সবাই স্বীকার করে যে আইফোনের এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সফলতার সাথে আইফোন এপ্লিকেশন তৈরি করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানী Prolog Inc. Bangladesh। এ নিয়ে কথা বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং আইফোন টিম লিডার বেঞ্জামিন বাসারের সাথে। তিনি গত এক বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানটিতে আইফোনের জন্য বিভিন্ন এপ্লিকেশন তৈরি করছেন। বেঞ্জামিন বাশার পড়ালেখা করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। আইফোন এপ্লিকেশন তৈরি নিয়ে তিনি আমাদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা তোলে ধরেন।
জাকারিয়া: আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কোন কোন ধরনের কাজ হয়?
বেঞ্জামিন: আমাদের এখানে প্রায় সব ধরনের মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট হয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইফোন, ব্লাকবেরী, এন্ড্রোয়েড, পাম এবং J2ME।
জাকারিয়া: আপনারা আইফোনের জন্য কোন কোন ধরনের এপ্লিকেশন তৈরি করে থাকেন?
বেঞ্জামিন: আমি যে সকল প্রজেক্টে কাজ করেছি তার মধ্য বেশিরভাগ হচ্ছে ইউটিলিটি সফটওয়্যার, সাথে কিছু গেমস রয়েছে। আমাদের গেমস এবং ইউটিলিটি সফটওয়্যারগুলো খুব জনপ্রিয়। তারমধ্যে কিছু স্ট্রিমিং সফটওয়্যারও রয়েছে। আমি সর্বশেষ যে সফটওয়্যার তৈরি করেছি সেটি একটি ভিডিও স্ট্রিমিং সফটওয়্যার। এটিও খুব জনপ্রিয় হয়েছে।
জাকারিয়া: এপ্লিকেশনগুলো তৈরি করতে কি রকম সময় লাগে?
বেঞ্জামিন: আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী এপ্লিকেশন তৈরি করে থাকি। স্বল্পমেয়াদী এপ্লিকেশনগুলো এক বা দুইজন প্রোগ্রামার ১৫ দিন থেকে এক মাসে তৈরি করে থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদী প্রজেক্টে দুই থেকে তিন জন প্রোগ্রামার কাজ করে। এই ধরনের এপ্লিকেশনে ৬ মাস ধরে ডেভেলপমেন্ট এবং সাপোর্ট দেয়া হয়।
জাকারিয়া: আপনারা কি ফ্রি এপ্লিকেশন তৈরি করে?
বেঞ্জামিন: আমাদের স্ট্র্যাটেজি এরকম, আমরা প্রত্যেকটা এপ্লিকেশনের একটা ফ্রি বা লাইট ভার্সন এবং একটা Paid ভার্সন তৈরি করি। লাইট ভার্সনটা বিজ্ঞাপন নির্ভর হয়ে থাকে। গেমসের ক্ষেত্রে লাইট ভার্সনে লেভেলের পার্থক্য থাকে। এক্ষেত্রে একটা বা দুইটা লেভেল খেলা যায় আর মূল ভার্সনে দশ থেকে বিশটা লেভেল থাকে। ফ্রি ভার্সনগুলো প্রথমে বেশি বেশি ডাউনলোড হয়, তারপর আস্তে আস্তে মূল ভার্সন বিক্রি হতে থাকে।
জাকারিয়া: এপ্লিকেশন বিক্রির ক্ষেত্রে আপনাদের সর্বোচ্চ সাফল্য কতটুকু?
বেঞ্জামিন: আইফোনের হেলথকেয়ার বিভাগে আমাদের একটি এপ্লিকেশন তিনমাস শীর্ষ ৫০ মধ্যে ছিল। ডাউনলোডের সংখ্যা আমি এই মূহুর্তে সঠিকভাবে বলতে পারছি না, তবে আনুমানিকভাবে লাইট ভার্সনটা ১৫ হাজারের উপর, আর মূল ভার্সটা প্রায় দুই হাজারের উপর ডাউনলোড হয়েছে।
জাকারিয়া: আইফোনের এপ্লিকেশন তৈরির চাহিদা কিরকম বা বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা কতটুকু?
বেঞ্জামিন: আপনি নিশ্চয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটে দেখেছেন, আইফোন এবং আইপ্যাডের কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে oDesk.com এ আইফোনের ভাল কাজ পাওয়া যায়। আর আমি যতদূর জানি ঢাকায় তিন থেকে চারটা বড় বড় সফটওয়্যার ফার্ম রয়েছে যেখানে আইফোন এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট হয়।
জাকারিয়া: একজন নতুন প্রোগ্রামারে এই ধরনের কাজ শিখতে কিরকম সময় লাগতে পারে?
বেঞ্জামিন: C++ বা Java যদি ভাল জানা থাকে তাহলে তিন মাসের মধ্যেই এই ধরনের কাজে দক্ষ হওয়া সম্ভব।
জাকারিয়া: নতুনরা এ ধরনের কাজে কি কি ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
বেঞ্জামিন: আইফোনের এপ্লিকেশন তৈরি করার পর এপলের রিভিউ টিম তা যাচাই-বাছাই করে দেখে। এক্ষেত্রে তারা খুবই নিখুত কাজ আশা করে। এপ্লিকেশনে কোন ভুল থাকলে বা কোন কারণে প্রোগ্রামটি ক্রাশ করলে তারা তা ধরে ফেলে। তাই সবসময় অপটিমাইজড কাজ করতে হবে, না হলে বারবার রিজেক্টেড হতে হয়। আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এপ্লিকেশনগুলোকে যথাযথভাবে মার্কেটিং করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের রিভিউ সাইট আছে যারা নতুন নতুন এপ্লিকেশনের রিভিউ করে। সেই সাইটগুলোতে ভাল রিভিউ লেখা হলে এপ্লিকেশনগুলো ভাল বিক্রি হয়।
জাকারিয়া: বিষয়গুলো জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বেঞ্জামিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আইফোন এপ্লিকেশন প্লাটফরম
আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম iPhone OS টি মূলত Mac OS X এর মোবাইল সংস্করণ। সিস্টেমটি iPod Touch, iPhone এবং iPad এ ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে একই এপ্লিকেশন তৈরি করে সামান্য পরিবর্তন এনে তিনটি ডিভাইসেই চালানো যায়। এপ্লিকেশনগুলো তিন ধরনের পদ্ধতিতে তৈরি করা যায় -
১) ওয়েব এপ্লিকেশন:
প্রথম দিকে iPhone OS 1.0 ভার্সনে সকল এপ্লিকেশনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে ওয়েবভিত্তিক তৈরি করতে হতো এবং এগুলো মোবাইল সাফারী ওয়েব ব্রাউজারে চালাতে হতো। যেহেতু ব্রাউজারটি ফ্ল্যাশ বা সিলভারলাইট প্লাগইনস সাপোর্ট করে না তা ওই সব এপ্লিকেশনগুলো ছিল HTML, CSS এবং Javascript নির্ভর। এই পদ্ধতির এপ্লিকেশন তৈরি এখনও চালু আছে, বিশেষ করে যে সকল এপ্লিকেশন আইফোনের পাশাপাশি অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি করতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা তৈরি না করে ওয়েব এপ্লিকেশন তৈরি করাই অধিক যুক্তিসংগত।
২) নেটিভ এপ্লিকেশন:
iPhone OS 2.0 প্রকাশের সাথে সাথে ডিভাইসটিতে iPhone SDK এবং App Store এর সূচনা হয়, ফলে ডেভেলপাররা Objective-C এবং Xcode এর সাহায্যে নেটিভ এপ্লিকেশন তৈরির সুযোগ পায়। নেটিভ এপ্লিকেশনগুলো ডিভাইসে সরাসরি ইন্সটল হয় এবং ডিভাইসের হার্ডওয়ার ব্যবহারের অনুমতি পায়। এই এপ্লিকেশনগুলো App Store এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডিভাইসে পৌছে দেয়া যায়। আইফোনের বেশিরভাগ এপ্লিকেশনগুলো এই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।
৩) হাইব্রিড এপ্লিকেশন:
উপরের দুই পদ্ধতির সমন্বিতরূপ হচ্ছে হাইব্রিড এপ্লিকেশন। অর্থাৎ এপ্লিকেশনটি App Store এ প্রকাশ করা যাবে এবং তা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ইন্সটল হবে, কিন্তু প্রোগ্রামটি তৈরি হবে মূলত HTML, CSS এবং Javascript দিয়ে। বর্তমানে এই ধরনের এপ্লিকেশন তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। এক্ষেত্রে অনেক ওপেনসোর্স লাইব্রেরী ও প্লাটফরম পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে QuickConnect, PhoneGap, AppCelerator এবং rhomobile।
শুরু করতে হবে যেভাবে
iPhone SDK দিয়ে এপ্লিকেশন তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন সেগুলো হল -
স্টিভ ডেমেটার যুক্তরাষ্ট্রে সানফ্রান্সিসকোতে বসবাসরত একজন প্রোগ্রমার। তিনি মূল চাকুরীর বাইরে অতিরিক্ত প্রজেক্ট হিসেবে আইফোনের জন্য Trism নামক একটি পাজল গেম তৈরি করেছিলেন। আর এখন তিনি তার চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ হচ্ছে ৪.৯৯ ডলার দামের এই ছোট গেমটি মাত্র দুই মাস বিক্রি করে তার তার আয় হয়েছে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ডলার। স্টিভ বর্তমানে কয়েকজন ডেভেলপার এবং ডিজাইনার রেখে পুরো মাত্রায় আইফোনের জন্য গেম তৈরি করছেন।
রাতারাতি সাফল্য পাওয়া দৃষ্টান্ত হচ্ছে iShoot নামক আরেকটি গেম। এটি একটি ট্যাংক যুদ্ধের গেম। ডেভেলপার ইথান নিকোলাস জানান তিনি সান মাইক্রোসিস্টেমে চাকুরী করতেন। অবসর সময়ে শখের বশে গেমটি তৈরি করেছিলেন এবং রিলিজ করার পর গেমটিতে আর কোন আপডেট আনেননি। ২.৯৯ ডলার দামের গেমটি প্রকাশের পর মোটামুটি কয়েকবার বিক্রি হয়েছিল যা ইথানের দৃষ্টিতে ছিল স্বাভাবিক। ক্রিসমাসের বন্ধে গেমটির একটি ফ্রি ভার্সন ছাড়ার পরিকল্পনা করেন, আশা ছিল আইফোনের গেমারদের কাছে গেমটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এই সিদ্ধান্তটিই তার ভাগ্য পরিবর্তনে ম্যাজিকের মত কাজ দেয়। ফ্রি ভার্সনটি ছাড়ার দশ দিনের মধ্যে মূল গেমটি একদিনে প্রায় ১৭ হাজার বার বিক্রি হয়ে iTunes App Store এর শীর্ষে চলে আসে। প্রতিবার বিক্রির জন্য Apple কে ৩০% কমিশন দেবার পর একদিনে তার আয় দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ডলারের উপর। একমাস পরে দেখা যায় গেমটি মোট ৩ লক্ষ বার বিক্রি হয়, যা থেকে তার আয় হয় ৬ লক্ষ ডলারের উপর। অন্যদিকে ফ্রি ভার্সনটি একই মাসে ২৪ লক্ষ বার ডাউনলোড হয়। ইথান জানান গেমটি তার তৈরি প্রথম আইফোন এপ্লিকেশন। এটি তৈরির পূর্বে আগে কখনও আইফোনের প্রোগ্রামিং ভাষা Objective-C তে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। গেমটির আইডিয়া অত্যন্ত সাধারণ, নিজের ট্যাংককে প্রতিরক্ষা করা এবং শত্রুর ট্যাংককে ধ্বংস করা। ফ্রি ভার্সনটিতে ৬ ধরনের অস্ত্র রয়েছে, অন্যদিকে মূল ভার্সনে রয়েছে ২০ টি অস্ত্র। ইথান আরো জানান গেমটি তৈরির পর এর প্রচারের জন্য তিনি কোন টাকা খরচ করেননি, এমনকি কোন ব্লগে রিভিউ পর্যন্ত লিখেননি। তিনি এমন একটি গেম তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা তিনি নিজে অবসর সময়ে খেলবেন। বর্তমানে ইথান নিকোলাস তার চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন, এবার তিনি গুরুত্বের সাথে আইফোনের জন্য গেম তৈরি শুরু করছেন।
প্রকৃতপক্ষে সবার হয়ত রাতারাতি কোটিপতি হবার সৌভাগ্য হবে না। তবে একথা সবাই স্বীকার করে যে আইফোনের এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সফলতার সাথে আইফোন এপ্লিকেশন তৈরি করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানী Prolog Inc. Bangladesh। এ নিয়ে কথা বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং আইফোন টিম লিডার বেঞ্জামিন বাসারের সাথে। তিনি গত এক বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানটিতে আইফোনের জন্য বিভিন্ন এপ্লিকেশন তৈরি করছেন। বেঞ্জামিন বাশার পড়ালেখা করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। আইফোন এপ্লিকেশন তৈরি নিয়ে তিনি আমাদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা তোলে ধরেন।
জাকারিয়া: আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কোন কোন ধরনের কাজ হয়?
বেঞ্জামিন: আমাদের এখানে প্রায় সব ধরনের মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট হয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইফোন, ব্লাকবেরী, এন্ড্রোয়েড, পাম এবং J2ME।
জাকারিয়া: আপনারা আইফোনের জন্য কোন কোন ধরনের এপ্লিকেশন তৈরি করে থাকেন?
বেঞ্জামিন: আমি যে সকল প্রজেক্টে কাজ করেছি তার মধ্য বেশিরভাগ হচ্ছে ইউটিলিটি সফটওয়্যার, সাথে কিছু গেমস রয়েছে। আমাদের গেমস এবং ইউটিলিটি সফটওয়্যারগুলো খুব জনপ্রিয়। তারমধ্যে কিছু স্ট্রিমিং সফটওয়্যারও রয়েছে। আমি সর্বশেষ যে সফটওয়্যার তৈরি করেছি সেটি একটি ভিডিও স্ট্রিমিং সফটওয়্যার। এটিও খুব জনপ্রিয় হয়েছে।
জাকারিয়া: এপ্লিকেশনগুলো তৈরি করতে কি রকম সময় লাগে?
বেঞ্জামিন: আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী এপ্লিকেশন তৈরি করে থাকি। স্বল্পমেয়াদী এপ্লিকেশনগুলো এক বা দুইজন প্রোগ্রামার ১৫ দিন থেকে এক মাসে তৈরি করে থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদী প্রজেক্টে দুই থেকে তিন জন প্রোগ্রামার কাজ করে। এই ধরনের এপ্লিকেশনে ৬ মাস ধরে ডেভেলপমেন্ট এবং সাপোর্ট দেয়া হয়।
জাকারিয়া: আপনারা কি ফ্রি এপ্লিকেশন তৈরি করে?
বেঞ্জামিন: আমাদের স্ট্র্যাটেজি এরকম, আমরা প্রত্যেকটা এপ্লিকেশনের একটা ফ্রি বা লাইট ভার্সন এবং একটা Paid ভার্সন তৈরি করি। লাইট ভার্সনটা বিজ্ঞাপন নির্ভর হয়ে থাকে। গেমসের ক্ষেত্রে লাইট ভার্সনে লেভেলের পার্থক্য থাকে। এক্ষেত্রে একটা বা দুইটা লেভেল খেলা যায় আর মূল ভার্সনে দশ থেকে বিশটা লেভেল থাকে। ফ্রি ভার্সনগুলো প্রথমে বেশি বেশি ডাউনলোড হয়, তারপর আস্তে আস্তে মূল ভার্সন বিক্রি হতে থাকে।
জাকারিয়া: এপ্লিকেশন বিক্রির ক্ষেত্রে আপনাদের সর্বোচ্চ সাফল্য কতটুকু?
বেঞ্জামিন: আইফোনের হেলথকেয়ার বিভাগে আমাদের একটি এপ্লিকেশন তিনমাস শীর্ষ ৫০ মধ্যে ছিল। ডাউনলোডের সংখ্যা আমি এই মূহুর্তে সঠিকভাবে বলতে পারছি না, তবে আনুমানিকভাবে লাইট ভার্সনটা ১৫ হাজারের উপর, আর মূল ভার্সটা প্রায় দুই হাজারের উপর ডাউনলোড হয়েছে।
জাকারিয়া: আইফোনের এপ্লিকেশন তৈরির চাহিদা কিরকম বা বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা কতটুকু?
বেঞ্জামিন: আপনি নিশ্চয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটে দেখেছেন, আইফোন এবং আইপ্যাডের কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে oDesk.com এ আইফোনের ভাল কাজ পাওয়া যায়। আর আমি যতদূর জানি ঢাকায় তিন থেকে চারটা বড় বড় সফটওয়্যার ফার্ম রয়েছে যেখানে আইফোন এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট হয়।
জাকারিয়া: একজন নতুন প্রোগ্রামারে এই ধরনের কাজ শিখতে কিরকম সময় লাগতে পারে?
বেঞ্জামিন: C++ বা Java যদি ভাল জানা থাকে তাহলে তিন মাসের মধ্যেই এই ধরনের কাজে দক্ষ হওয়া সম্ভব।
জাকারিয়া: নতুনরা এ ধরনের কাজে কি কি ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
বেঞ্জামিন: আইফোনের এপ্লিকেশন তৈরি করার পর এপলের রিভিউ টিম তা যাচাই-বাছাই করে দেখে। এক্ষেত্রে তারা খুবই নিখুত কাজ আশা করে। এপ্লিকেশনে কোন ভুল থাকলে বা কোন কারণে প্রোগ্রামটি ক্রাশ করলে তারা তা ধরে ফেলে। তাই সবসময় অপটিমাইজড কাজ করতে হবে, না হলে বারবার রিজেক্টেড হতে হয়। আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এপ্লিকেশনগুলোকে যথাযথভাবে মার্কেটিং করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের রিভিউ সাইট আছে যারা নতুন নতুন এপ্লিকেশনের রিভিউ করে। সেই সাইটগুলোতে ভাল রিভিউ লেখা হলে এপ্লিকেশনগুলো ভাল বিক্রি হয়।
জাকারিয়া: বিষয়গুলো জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বেঞ্জামিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আইফোন এপ্লিকেশন প্লাটফরম
আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম iPhone OS টি মূলত Mac OS X এর মোবাইল সংস্করণ। সিস্টেমটি iPod Touch, iPhone এবং iPad এ ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে একই এপ্লিকেশন তৈরি করে সামান্য পরিবর্তন এনে তিনটি ডিভাইসেই চালানো যায়। এপ্লিকেশনগুলো তিন ধরনের পদ্ধতিতে তৈরি করা যায় -
১) ওয়েব এপ্লিকেশন:
প্রথম দিকে iPhone OS 1.0 ভার্সনে সকল এপ্লিকেশনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে ওয়েবভিত্তিক তৈরি করতে হতো এবং এগুলো মোবাইল সাফারী ওয়েব ব্রাউজারে চালাতে হতো। যেহেতু ব্রাউজারটি ফ্ল্যাশ বা সিলভারলাইট প্লাগইনস সাপোর্ট করে না তা ওই সব এপ্লিকেশনগুলো ছিল HTML, CSS এবং Javascript নির্ভর। এই পদ্ধতির এপ্লিকেশন তৈরি এখনও চালু আছে, বিশেষ করে যে সকল এপ্লিকেশন আইফোনের পাশাপাশি অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি করতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা তৈরি না করে ওয়েব এপ্লিকেশন তৈরি করাই অধিক যুক্তিসংগত।
২) নেটিভ এপ্লিকেশন:
iPhone OS 2.0 প্রকাশের সাথে সাথে ডিভাইসটিতে iPhone SDK এবং App Store এর সূচনা হয়, ফলে ডেভেলপাররা Objective-C এবং Xcode এর সাহায্যে নেটিভ এপ্লিকেশন তৈরির সুযোগ পায়। নেটিভ এপ্লিকেশনগুলো ডিভাইসে সরাসরি ইন্সটল হয় এবং ডিভাইসের হার্ডওয়ার ব্যবহারের অনুমতি পায়। এই এপ্লিকেশনগুলো App Store এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডিভাইসে পৌছে দেয়া যায়। আইফোনের বেশিরভাগ এপ্লিকেশনগুলো এই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।
৩) হাইব্রিড এপ্লিকেশন:
উপরের দুই পদ্ধতির সমন্বিতরূপ হচ্ছে হাইব্রিড এপ্লিকেশন। অর্থাৎ এপ্লিকেশনটি App Store এ প্রকাশ করা যাবে এবং তা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ইন্সটল হবে, কিন্তু প্রোগ্রামটি তৈরি হবে মূলত HTML, CSS এবং Javascript দিয়ে। বর্তমানে এই ধরনের এপ্লিকেশন তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। এক্ষেত্রে অনেক ওপেনসোর্স লাইব্রেরী ও প্লাটফরম পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে QuickConnect, PhoneGap, AppCelerator এবং rhomobile।
শুরু করতে হবে যেভাবে
iPhone SDK দিয়ে এপ্লিকেশন তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন সেগুলো হল -
- একটি ম্যাক কম্পিউটার যাতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে Mac OS X Snow Leopard এর ১০.৬.২ বা তার পরবর্তী ভার্সন। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে দাম দিয়ে ম্যাক কম্পিউটার কেনার সামর্থ সবার হয়ত হবে না। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে সাধারণ x86 হার্ডওয়্যারে OS X ইন্সটল করে কাজ চালানো যেতে পারে, যা সাধারণভাবে হ্যাকিন্টোশ নামে পরিচিত। অর্থাৎ একই কম্পিউটারে Windows বা Linux এর সাথে Dual Boot হিসেবে OS X ইন্সটল করা যায়। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে http://wiki.osx86project.org ওয়েবসাইটে।
- সাথে প্রয়োজন পড়বে একটি Apple Developer একাউন্ট। এজন্যhttp://developer.apple.com সাইটে গিয়ে একাউন্ট তৈরি করা যাবে। রেজিষ্ট্রশন করতে কোন টাকা লাগবে না। এর মাধ্যমে iPhone Simulator দিয়ে এপ্লিকেশন যাচাই করা যাবে, তবে নিজের ডিভাইসে ইন্সটল করতে চাইলে অথবা iTunes App Store এ বিক্রি করতে চাইলে বাৎসরিক ৯৯ ডলার ফি দিতে হবে।
- এবার কাজ শুরু করার জন্য ডেভেলপার একাউন্টে লগইন করে iPhone SDK এবং Xcode ডাউনলোড করে নিতে হবে। Xcode হচ্ছে একাধিক টুলে সমন্বয়ে গঠিত একটি IDE।
আইফোনের এপ্লিকেশন শেখার জন্য সবচেয়ে ভাল রিসোর্স পাওয়া যাবে Apple Developer ওয়েবসাইট থেকে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ নিয়ে নানা ধরনের টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইট চালু হয়েছে যাতে আইফোনের এপ্লিকেশন তৈরির প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে শেখানো হচ্ছে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা হচ্ছে -http://mobile.tutsplus.com।
লেখক - মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "আগস্ট ২০১০" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।