কম্পিউটার দিয়ে কাজ করাতে গেলে কম্পিউটার বুঝতে পারে, এমন ভাষায় তাকে নির্দেশ দিতে হয়। এটাই প্রোগ্রামিং ভাষা। প্রোগ্রামিং ভাষা অনেক রয়েছে এবং নিত্যনতুন তৈরি হচ্ছে। তবে অল্প কয়েকটি ভাষাই প্রোগ্রামারদের কাছে জনপ্রিয় হতে পেরেছে। তেমন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা হচ্ছে পাইথন। এর জনক গুইডো ভন রুযাম। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের ছুটিতে তিনি পাইথন তৈরি করা শুরু করেন।
তবে পাইথন বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ২০০০ সালে, ২.০ সংস্করণ চালু হওয়ার পরে। বর্তমানে পাইথনের ২.৭ এবং ৩.৪ সংস্করণ চালু রয়েছে। পাইথন একটি উচ্চস্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা। পাইথনে স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং করা যায়। এ ছাড়া ফাংশনাল প্রোগ্রামিংও করা যায় পাইথন দিয়ে। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে যে সারা পৃথিবীতে বর্তমানে জনপ্র বিচারে পাইথনের স্থান চতুর্থ (শীর্ষ তিনটি হচ্ছে জাভা, সি, সি প্লাস প্লাস), আর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত হয় পাইথন ব্যবহার করে। এ ছাড়া বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুগলের তিনটি আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রামিং ভাষার একটি হচ্ছে পাইথন। পাইথনের এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী? পাইথন প্রোগ্রামাররা নিচের কারণগুলোকেই
প্রধান মনে করেন:
পাইথনে সংকেত (কোড) সহজে পড়া যায়।
কোড সি বা জাভার চেয়ে তুলনামূলক অনেক ছোট হয়।
পাইথনে রয়েছে লিস্ট, ডিকশনারি ও সেটের মতো চমৎকার ডেটা কাঠামো।
পাইথন বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়।
বিশাল ও কার্যকর স্ট্যান্ডার্ড লাইব্রেরি রয়েছে।
শক্তিশালী অনলাইন কমিউনিটি।
চমৎকার ওয়েব ফ্রেমওয়ার্ক (জ্যাঙ্গো, ফ্লাস্ক ইত্যাদি)।
মোটামুটি সব লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে পাইথন থাকে, আলাদাভাবে ইনস্টল করতে হয় না। উইন্ডোজে পাইথন আলাদা করে ইনস্টল করতে হয়, যা পাইথনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়।
পাইথন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরিতে। জ্যাঙ্গো (django) ফ্রেমওয়ার্কটি খুবই জনপ্রিয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অটোমেশন সফটওয়্যার নির্মাণ, বায়ো ইনফরমেটিকস, মেশিন লার্নিং, তথ্য বিশ্লেষণ, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, ওয়েব ক্রলার তৈরিতেও পাইথনের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে পাইথনের ব্যবহার। বেশ কিছু দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পাইথন ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর অটোমেশনের লক্ষ্যে নির্মিত ‘ওয়েব বেইজড ডেটাবেজ’ সফটওয়্যারটি পাইথন দিয়েই তৈরি করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড। পাইথন শেখার জন্য পাইথনের আনুষ্ঠানিক টিউটোরিয়াল রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে রয়েছে বিভিন্ন বই ও অনলাইন কোর্স। তবে বাংলা ভাষায়ও পাইথন শেখার সুযোগ রয়েছে অনলাইনে। একেবারে নতুনদের জন্য আছে ‘হুকুশ পাকুশের প্রোগ্রামিং শিক্ষা’, যেটি তৈরি করেছেন ইকরাম মাহমুদ। আর শিক্ষক ডট কম-এ ‘পাইথন পরিচিতি’ নামে ধারাবাহিক ভিডিও বক্তৃতা যা পাইথন শেখার জন্য বেশ কার্যকর। সম্প্রতি দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুল, বাংলাদেশ পাইথন ইউজার গ্রুপ ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক মিলে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে ‘পাইকন ঢাকা ২০১৪’, যা পাইথনের ওপর বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
0 comments:
Post a Comment
প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত যানাতে ভুলবেন না । তবে এমন কিছু মন্তব্য করবেন না যাতে লেখকের মনে আঘাত করে ।