রবি সহ যেকোন অপারেটরের সিমকার্ড দিয়ে ফ্রি ইন্টারনেট কিভাবে চালাতে হবে শিরোনামে পোস্ট দেখে অবাক হচ্ছেন ? অবাক হবারই কথা কারন আমরা হুজুগে বাঙ্গালী, কিভাবে ফ্রি ইন্টারনেট সেবার নামে রবি অভিনব প্রতারণা শুরু করেছে আপনিও ভিকটিম হবার আগে পূর্ণ পোস্টটি পড়ে নিন ।
বিশ্বজুড়ে বিতর্কের মধ্যে থাকা ফেসবুকের ‘ইন্টারনেট ডট ওআরজি’র মাধ্যমে বাংলাদেশে নিজেদের গ্রাহকদের জন্য ২৮টি সাইটে ফ্রি ব্রাউজিং শো চালু করেছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। গতকাল রোববার স্থানীয় একটি হোটেলে এ সেবার উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে এ সেবাকে ‘ফ্রি ইন্টারনেট’ হিসেবে উল্লেখ করায় শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রি ইন্টারনেটের নামে ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধা দিয়ে সেখানে গ্রাহকদের ‘পে পার ইউজের’ প্রতারণার ফাঁদে ফেলারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তারা বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারসহ ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা করা হলে তাতেই সাধারণ গ্রাহক উপকৃত হতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা চালুর মাধ্যমেও ইন্টারনেট সেবাকে সহজলভ্য করা সম্ভব।
প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, করপোরেটের ফ্রি সেবা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে গ্রাহকদের গলায় ছুরি চালানোর আরেকটি আয়োজন। ফেসবুক ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়ার কথা বলে নিজেদের বিজ্ঞাপন এবং চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যকেই বিস্তৃত করছে। এর ফলে মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট স্বীকৃত হওয়ার যে দাবি, তা উপেক্ষিত হয়েছে। রবি যে সেবা চালু করেছে, সেখানেও রবির গ্রাহকরা রবির সিমকার্ড ব্যবহারের পয়সা দিয়েই কিছু সাইটে ব্রাউজ করার সুবিধা পাবেন মাত্র। এর অধিক কিছু নয়। এটাকে ফ্রি ইন্টারনেট বলা যায় না। এ ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান সমকালকে বলেন, বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ডট ওআরজি বিতর্কিত হয়েছে। যে কারণে ভারতে এটি বর্জন করা হয়েছে। কোনো দেশেই সরকার এর সঙ্গে যুক্ত হয়নি।
বাংলাদেশে সরকার কেন এ ধরনের বিতর্কিত উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হলো, তার কারণ অনেকেই বুঝতে পারছেন না। ইন্দোনেশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ওয়েবসাইট টেক ইন সিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে মালয়েশিয়ার অজিয়াটা (রবির মূল প্রতিষ্ঠান) লিমিটেড পরিচালিত এক্সএল অজিয়াটা ইন্দোনেশিয়ায় উদ্যোগ নিয়েও সেটি চালু করেনি। এর কারণ হিসেবে এক্সএল অজিয়াটার চিফ ডিজিটাল সার্ভিস অফিসার অসিয়াতার বক্তব্য উদৃব্দত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত ইন্টারনেট ডট ওআরজির সেবাটি বিশ্বজুড়ে বিতর্কের মধ্যে রয়েছে এবং এ সেবার মাধ্যমে গ্রাহক ব্রাউজিং সুবিধা পেলেও ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা পাবেন না, ফলে ভবিষ্যতে নতুন বিতর্ক উঠতে পারে। এ কারণেই সেবাটি চালু করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) ইকরাম কবীর সমকালকে বলেন, অজিয়াটা রবি এবং এক্সএলের মূল প্রতিষ্ঠান হলেও বিভিন্ন দেশে অজিয়াটার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি ও সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ হয়ে থাকে। এক্সএল অজিয়াটার সিদ্ধান্তের সঙ্গে রবি অজিয়াটার কোনো সম্পর্ক নেই।
রবির ফ্রি ব্রাউজিং সেবা যেভাবে: সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফ্রি ব্রাউজিং সেবা উপভোগ করার জন্য রবির গ্রাহকদের প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে ইন্টারনেট ডট ওআরজি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। ডাউনলোড হলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যাবে। এর পর এই অ্যাপ চালু করলে তালিকায় থাকা সাইটগুলো বিনা খরচে ব্রাউজ করা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রবির গ্রাহকরা বিনা খরচের বাইরে যদি কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চান, তাহলে সাধারণ ইন্টারনেট চার্জ প্রযোজ্য হবে। গ্রাহক কোনো ডাটা প্যাক কিংবা রবির নির্ধারিত প্যাকেজ না কিনে ভিডিও কনটেন্ট দেখতে চান, তাহলে পে পার ইউজ ভিত্তিতে চার্জ প্রযোজ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে রবির সিইও সুপুন বীরাসিংহে, চিফ অপারেটিং অফিসার মাহতাবউদ্দিন আহমেদ, চিফ করপোরেট অ্যান্ড পিপল অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ এবং ফেসবুকের গ্গ্নোবাল অপারেটর পার্টনারশিপের পরিচালক মারকু মাকেলেইনেন উপস্থিত ছিলেন।
আসল চিত্র: ইন্টারনেট ওআরজির পদ্ধতি এবং রবির সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধায় রবির গ্রাহকরা শুধু একটি সাইট দেখা ছাড়া ইন্টারনেটে কোনো ধরনের ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবেন না। অর্থাৎ যে কোনো ধরনের ডাউনলোড, ভিডিও সাইটে অনলাইনে ভিডিও দেখা কিংবা অনলাইনে অডিওতে গানও শুনতে পারবেন না। অর্থাৎ ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সাইট আদৌ ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধার আওতায় থাকবে না। এমনকি ই-মেইলে কোনো ফাইলও পাঠানো যাবে না। ডাউনলোড, ভিডিও কিংবা অডিও কনটেন্ট উপভোগের জন্য অবশ্যই পৃথক মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক না বুঝে কোনো নির্ধারিত প্যাকেজ ছাড়াই ফ্রি ব্রাউজিং সাইট থেকে কোনো ভিডিও কনটেন্ট দেখতে চান, তাহলে তাকে অস্বাভাবিক অতিরিক্ত মূল্যের বোঝা কাঁধে নিতে হতে পারে।
রবির ওয়েবসাইটে দেওয়া ইন্টারনেট প্যাকেজে পে পার ইউজের মূল্য প্রতি কিলোবাইট দেড় পয়সা। এখন কোনো গ্রাহক এক মেগাবাইটের ফাইল ডাউনলোড কিংবা অনলাইনে প্লে করলে তাকে পরিশোধ করতে হবে ১৫ টাকা। যদি ফাইলটি ১০০ মেগাবাইটের হয়, তাহলে পরিশোধ করতে হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। যদি ফাইলটি এক জিবি কিংবা এক হাজার মেগাবাইটের হয়, তাহলে পরিশোধ করতে হবে ১৫ হাজার টাকা। অথচ রবির নির্ধারিত ইন্টারনেট প্যাকেজে এক জিবির বর্তমান মূল্য মাত্র ২৭৫ টাকা। এটা স্পষ্ট, একজন গ্রাহক না বুঝে ফ্রি ব্রাউজিং সাইটে গিয়ে পে পার ইউজের ফাঁদে পড়লে মুহূর্তেই তার সিমকার্ডের অ্যাকাউন্টের অর্থ পুরোটাই হাওয়া হয়ে যাবে। এদিকে রবির একাধিক গ্রাহক গতকাল রোববার সমকালকে জানান, ফ্রি ব্রাউজিং সাইটগুলোতে ইন্টারনেটে অস্বাভাবিক ধীরগতি পাওয়া যাচ্ছে।
রবির ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধা বাংলাদেশে প্রথম নয়। বাংলাদেশে এর আগেও একাধিক মোবাইল অপারেটর ফেসবুক, উইকিপিডিয়ার মতো সাইট ইন্টারনেট ডট ওআরজির ব্যবহার ছাড়াই নিজেদের গ্রাহককে ফ্রি ব্রাউজিংয়ের সুবিধা অনেক আগেই চালু করেছে এবং এখনও দিচ্ছে।
প্রযুক্তি এক্সপার্ট বদরুদ্দোজা মাহমুদ তুহিন ফেসবুকে লিখেছেনঃ
ফ্রি ইন্টারনেট নাকি জোচ্চুরি?
বেশ কয়েকমাস ধরেই ফেসবুকের বিশ্বব্যাপি ফ্রি ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার প্রকল্প ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বেশিরভাগই দেখছি খুব খুশি, ফ্রি ইন্টারনেট পাওয়ার চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। তবে আসলে এটা নিয়ে এতো ফালাফালির কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
আসুন মাত্র কয়েকটি কথার মাধ্যমেই জেনে নিই ইন্টারনেট ডট অর্গের ফ্রি ইন্টারনেট আসলেই কি ফ্রি?
ধরুন, বিনামূল্যে ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য এই সেবা নিলেন। তারজন্য আপনাকে মোবাইলের ডাটা কানেকশন অন করতে হবে। এখন আপনি ফেসবুক ব্রাউজ করলেও আপনার মোবাইলের ব্যাকএন্ডে চলতে থাকা বিভিন্ন অ্যাপস ইন্টারনেটে যুক্ত হবে। অ্যাপসগুলো আপডেট হবে বা তার স্বয়ংক্রিয় কাজগুলো চালিয়ে যাবে। যেহেতু ঐসব অ্যাপস যেমন জিমেইল, গুগল প্লে স্টোর, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এই ফ্রি ইন্টারনেট প্রযোজ্য নয় তাই আপনাকে মোবাইল থেকেই কিলোবাইট প্রতি উচ্চহারে টাকা কাটতে থাকবে। ফলে আপনি কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে ফ্রি ইন্টারনেটের আওতায় থাকা এইসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার করলে অপারেটরগুলো যে টাকা পেতো তার থেকে আরও বেশি টাকা আয় করতে পারবে এই মাধ্যমে। ঠিক তেমনই ঘটেছে সম্প্রতি গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের ৪ জিবি ফ্রি ফেসবুকের ক্ষেত্রে। আপনি যতোই ফ্রি ফেসবুক চালাতে যান না কেনো দেখবেন আপনার টাকা ঠিকই কেটে নিচ্ছে।
আবার ফেসবুকে দেখলেন একটি নিউজ লিংক। সেখান থেকে ইচ্ছা হলো ঐ নিউজটি পড়ার। ঐ নিউজের সাইটে ভিজিট করা মাত্রই আপনার ব্যালেন্স থেকে টাকা গায়েব হতে শুরু করবে। এমনিভাবে ফেসবুক কিংবা বিনামূল্যের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস থেকে অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপস সেটা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক ভিজিট করলেই আপনার টাকা গায়েব হবে।
এবার দেখুন আরও কিভাবে অপারেটরগুলো টাকা পাবে – ধরুন বিনামূল্যের এসব সেবা ব্যবহারের সময় আপনার টাকা কেটে নিলো। তখন আপনি বিষয়টি না বুঝে অপারেটরকে ফোন দিলেন। কয়েক মিনিট অপেক্ষায় থাকার পর তারা বিষয়টি জেনে বলবে যে আপনি ফ্রি ফেসবুক ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ঐ সময়ে আপনি অন্য অ্যাপস বা ওয়েবসাইটও ব্যবহার করেছেন। তাই টাকা কেটেছে। এরপর আপনি মনে মনে অপারেটরকে গালাগাল করে ফোনটি কেটে দিলেন। লাভটা কিন্তু আবারও অপারেটর এর হলো। এভাবে প্রতিদিন ১ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফোন দিলেও অপারেটরের কয়েক লাখ কিংবা কোটি টাকা ইনকাম হবে শুধুমাত্র ফোনকল থেকে।
আরও অনেক মাধ্যম আছে যেগুলোর মাধ্যমে অপারেটরগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিবে এই বিনামূল্যের ইন্টারনেট প্রকল্পের মাধ্যমে। আর বিনামূল্যের ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার নামে ফেসবুক কেনো এগুলো করছে সেটা ভালোভাবেই সবারই জানা। অন্যসব বিষয়গুলো বাদ দিলেও শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের দিকটা বিবেচনা করলেই তো ফেসবুকের লাভটা ভালোভাবে বোঝা যায়।
তবে এখন আসুন কিভাবে এই বিনামূল্যের ইন্টারনেট কিছুটা হলেও আপনার জন্য লাভজনক সেটা জেনে নিই:
ধরুন, আপনি এর আগে প্রতিমাসে ১ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন, সেখানে ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য আপনার ৬০০-৭০০ মেগাবাইট কাটতো। এখনও সেটিই করুন। বিনামূল্যের ফেসবুক ব্যবহার করার কারণে আপনার ১ জিবি প্যাকেজ থেকে ফেসবুক ব্যবহারের জন্য কোনো মেগাবাইট কাটবে না। ফলে এখন পুরোটাই গুগলের বিভিন্ন সেবা, অন্য অ্যাপস বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবেন।
আর যাদের সাধারণ ফিচার ফোন (অ্যান্ড্রয়েড. আইওএস ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেম বিহীন) তারা এই ফ্রি ইন্টারনেট অনেকাংশেই কাজে লাগাতে পারবেন। কারণ ফিচার ফোনগুলোতে সাধারণত ব্যাকএন্ডে সাধারণত কোনো অ্যাপস চলে না। তাই এক্ষেত্রে মোবাইল থেকে টাকা কাটার সম্ভাবনা কম। তবে ভুলেও অন্য ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার করবেন না।
ইন্টারনেট ডট অর্গ এর এই ফ্রি ইন্টারনেট নিয়ে বললে শেষ হবে না। আপাতত মনে হয় এটুকুতেই বোঝা যাচ্ছে এটা সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য কতোটুকু লাভজনক?
রবির ফ্রি ব্রাউজিং সেবা যেভাবে: সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফ্রি ব্রাউজিং সেবা উপভোগ করার জন্য রবির গ্রাহকদের প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে ইন্টারনেট ডট ওআরজি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। ডাউনলোড হলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যাবে। এর পর এই অ্যাপ চালু করলে তালিকায় থাকা সাইটগুলো বিনা খরচে ব্রাউজ করা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রবির গ্রাহকরা বিনা খরচের বাইরে যদি কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চান, তাহলে সাধারণ ইন্টারনেট চার্জ প্রযোজ্য হবে। গ্রাহক কোনো ডাটা প্যাক কিংবা রবির নির্ধারিত প্যাকেজ না কিনে ভিডিও কনটেন্ট দেখতে চান, তাহলে পে পার ইউজ ভিত্তিতে চার্জ প্রযোজ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে রবির সিইও সুপুন বীরাসিংহে, চিফ অপারেটিং অফিসার মাহতাবউদ্দিন আহমেদ, চিফ করপোরেট অ্যান্ড পিপল অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ এবং ফেসবুকের গ্গ্নোবাল অপারেটর পার্টনারশিপের পরিচালক মারকু মাকেলেইনেন উপস্থিত ছিলেন।
আসল চিত্র: ইন্টারনেট ওআরজির পদ্ধতি এবং রবির সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধায় রবির গ্রাহকরা শুধু একটি সাইট দেখা ছাড়া ইন্টারনেটে কোনো ধরনের ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবেন না। অর্থাৎ যে কোনো ধরনের ডাউনলোড, ভিডিও সাইটে অনলাইনে ভিডিও দেখা কিংবা অনলাইনে অডিওতে গানও শুনতে পারবেন না। অর্থাৎ ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সাইট আদৌ ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধার আওতায় থাকবে না। এমনকি ই-মেইলে কোনো ফাইলও পাঠানো যাবে না। ডাউনলোড, ভিডিও কিংবা অডিও কনটেন্ট উপভোগের জন্য অবশ্যই পৃথক মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক না বুঝে কোনো নির্ধারিত প্যাকেজ ছাড়াই ফ্রি ব্রাউজিং সাইট থেকে কোনো ভিডিও কনটেন্ট দেখতে চান, তাহলে তাকে অস্বাভাবিক অতিরিক্ত মূল্যের বোঝা কাঁধে নিতে হতে পারে।
রবির ওয়েবসাইটে দেওয়া ইন্টারনেট প্যাকেজে পে পার ইউজের মূল্য প্রতি কিলোবাইট দেড় পয়সা। এখন কোনো গ্রাহক এক মেগাবাইটের ফাইল ডাউনলোড কিংবা অনলাইনে প্লে করলে তাকে পরিশোধ করতে হবে ১৫ টাকা। যদি ফাইলটি ১০০ মেগাবাইটের হয়, তাহলে পরিশোধ করতে হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। যদি ফাইলটি এক জিবি কিংবা এক হাজার মেগাবাইটের হয়, তাহলে পরিশোধ করতে হবে ১৫ হাজার টাকা। অথচ রবির নির্ধারিত ইন্টারনেট প্যাকেজে এক জিবির বর্তমান মূল্য মাত্র ২৭৫ টাকা। এটা স্পষ্ট, একজন গ্রাহক না বুঝে ফ্রি ব্রাউজিং সাইটে গিয়ে পে পার ইউজের ফাঁদে পড়লে মুহূর্তেই তার সিমকার্ডের অ্যাকাউন্টের অর্থ পুরোটাই হাওয়া হয়ে যাবে। এদিকে রবির একাধিক গ্রাহক গতকাল রোববার সমকালকে জানান, ফ্রি ব্রাউজিং সাইটগুলোতে ইন্টারনেটে অস্বাভাবিক ধীরগতি পাওয়া যাচ্ছে।
রবির ফ্রি ব্রাউজিং সুবিধা বাংলাদেশে প্রথম নয়। বাংলাদেশে এর আগেও একাধিক মোবাইল অপারেটর ফেসবুক, উইকিপিডিয়ার মতো সাইট ইন্টারনেট ডট ওআরজির ব্যবহার ছাড়াই নিজেদের গ্রাহককে ফ্রি ব্রাউজিংয়ের সুবিধা অনেক আগেই চালু করেছে এবং এখনও দিচ্ছে।
প্রযুক্তি এক্সপার্ট বদরুদ্দোজা মাহমুদ তুহিন ফেসবুকে লিখেছেনঃ
ফ্রি ইন্টারনেট নাকি জোচ্চুরি?
বেশ কয়েকমাস ধরেই ফেসবুকের বিশ্বব্যাপি ফ্রি ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার প্রকল্প ইন্টারনেট ডট অর্গ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বেশিরভাগই দেখছি খুব খুশি, ফ্রি ইন্টারনেট পাওয়ার চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। তবে আসলে এটা নিয়ে এতো ফালাফালির কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
আসুন মাত্র কয়েকটি কথার মাধ্যমেই জেনে নিই ইন্টারনেট ডট অর্গের ফ্রি ইন্টারনেট আসলেই কি ফ্রি?
ধরুন, বিনামূল্যে ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য এই সেবা নিলেন। তারজন্য আপনাকে মোবাইলের ডাটা কানেকশন অন করতে হবে। এখন আপনি ফেসবুক ব্রাউজ করলেও আপনার মোবাইলের ব্যাকএন্ডে চলতে থাকা বিভিন্ন অ্যাপস ইন্টারনেটে যুক্ত হবে। অ্যাপসগুলো আপডেট হবে বা তার স্বয়ংক্রিয় কাজগুলো চালিয়ে যাবে। যেহেতু ঐসব অ্যাপস যেমন জিমেইল, গুগল প্লে স্টোর, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এই ফ্রি ইন্টারনেট প্রযোজ্য নয় তাই আপনাকে মোবাইল থেকেই কিলোবাইট প্রতি উচ্চহারে টাকা কাটতে থাকবে। ফলে আপনি কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে ফ্রি ইন্টারনেটের আওতায় থাকা এইসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার করলে অপারেটরগুলো যে টাকা পেতো তার থেকে আরও বেশি টাকা আয় করতে পারবে এই মাধ্যমে। ঠিক তেমনই ঘটেছে সম্প্রতি গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের ৪ জিবি ফ্রি ফেসবুকের ক্ষেত্রে। আপনি যতোই ফ্রি ফেসবুক চালাতে যান না কেনো দেখবেন আপনার টাকা ঠিকই কেটে নিচ্ছে।
আবার ফেসবুকে দেখলেন একটি নিউজ লিংক। সেখান থেকে ইচ্ছা হলো ঐ নিউজটি পড়ার। ঐ নিউজের সাইটে ভিজিট করা মাত্রই আপনার ব্যালেন্স থেকে টাকা গায়েব হতে শুরু করবে। এমনিভাবে ফেসবুক কিংবা বিনামূল্যের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস থেকে অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপস সেটা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক ভিজিট করলেই আপনার টাকা গায়েব হবে।
এবার দেখুন আরও কিভাবে অপারেটরগুলো টাকা পাবে – ধরুন বিনামূল্যের এসব সেবা ব্যবহারের সময় আপনার টাকা কেটে নিলো। তখন আপনি বিষয়টি না বুঝে অপারেটরকে ফোন দিলেন। কয়েক মিনিট অপেক্ষায় থাকার পর তারা বিষয়টি জেনে বলবে যে আপনি ফ্রি ফেসবুক ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ঐ সময়ে আপনি অন্য অ্যাপস বা ওয়েবসাইটও ব্যবহার করেছেন। তাই টাকা কেটেছে। এরপর আপনি মনে মনে অপারেটরকে গালাগাল করে ফোনটি কেটে দিলেন। লাভটা কিন্তু আবারও অপারেটর এর হলো। এভাবে প্রতিদিন ১ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফোন দিলেও অপারেটরের কয়েক লাখ কিংবা কোটি টাকা ইনকাম হবে শুধুমাত্র ফোনকল থেকে।
আরও অনেক মাধ্যম আছে যেগুলোর মাধ্যমে অপারেটরগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিবে এই বিনামূল্যের ইন্টারনেট প্রকল্পের মাধ্যমে। আর বিনামূল্যের ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার নামে ফেসবুক কেনো এগুলো করছে সেটা ভালোভাবেই সবারই জানা। অন্যসব বিষয়গুলো বাদ দিলেও শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের দিকটা বিবেচনা করলেই তো ফেসবুকের লাভটা ভালোভাবে বোঝা যায়।
তবে এখন আসুন কিভাবে এই বিনামূল্যের ইন্টারনেট কিছুটা হলেও আপনার জন্য লাভজনক সেটা জেনে নিই:
ধরুন, আপনি এর আগে প্রতিমাসে ১ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন, সেখানে ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য আপনার ৬০০-৭০০ মেগাবাইট কাটতো। এখনও সেটিই করুন। বিনামূল্যের ফেসবুক ব্যবহার করার কারণে আপনার ১ জিবি প্যাকেজ থেকে ফেসবুক ব্যবহারের জন্য কোনো মেগাবাইট কাটবে না। ফলে এখন পুরোটাই গুগলের বিভিন্ন সেবা, অন্য অ্যাপস বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবেন।
আর যাদের সাধারণ ফিচার ফোন (অ্যান্ড্রয়েড. আইওএস ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেম বিহীন) তারা এই ফ্রি ইন্টারনেট অনেকাংশেই কাজে লাগাতে পারবেন। কারণ ফিচার ফোনগুলোতে সাধারণত ব্যাকএন্ডে সাধারণত কোনো অ্যাপস চলে না। তাই এক্ষেত্রে মোবাইল থেকে টাকা কাটার সম্ভাবনা কম। তবে ভুলেও অন্য ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার করবেন না।
ইন্টারনেট ডট অর্গ এর এই ফ্রি ইন্টারনেট নিয়ে বললে শেষ হবে না। আপাতত মনে হয় এটুকুতেই বোঝা যাচ্ছে এটা সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য কতোটুকু লাভজনক?
প্রযুক্তি এক্সপার্ট Aniruddha Adhikary ফেসবুকে লিখেছেনঃ
আমার কল্পনা আমায় বলে,১। বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম মানুষ এই “ফিরি ফেসবুক” এর সাইড ইফেক্ট বুঝবে না। তারা বুঝবে সরকার তো বিশাল কাম কইরালাইসে, বাংলার ঘরে ঘরে ফ্রি ইন্টারনেট! ডিজিটাল বাংলাদেশ!
২। এর পথ ধরে আস্তে আস্তে মোবাইল অপারেটররা ভাইবার কল, স্কাইপ কলে মিনিট প্রতি চার্জ করবে। কামাও টেকা যেমনে পারো! সরকারেরও লাভ, অপারেটরেরও লাভ।
৩। পরবর্তী জেনারেশনের ইন্টারনেট ইউজারদের Internet.org by Facebook খাওয়াবে, খেতে খেতে বড় হয়ে তারা জানবে ফেসবুক, বিং আর সরকারি সাইট মিলে ইন্টারনেট। আর সরকার ফেসবুকে সকল “অবাঞ্ছিত” বা “বৈপ্লবিক” বা Radical কন্টেন্ট ব্লক করা শুরু করবে, মতামত প্রকাশ করবি কই! তোরা তো ফেসবুকই চিনিস!
আইডিয়াটা শুনতে আমারও ক্রেজি লাগছে, এছাড়া আমি কোন কারণ দেখছি না Internet.org নামের হিপোক্রেসির অনুমোদন দেয়ার। আমার কথা শুনতে পাগলা পাগলা লাগছে? পড়ে আসুন এই লিংকে>>>https://openmedia.ca/blog/how-facebook-blocking-3-billion-soon-be-internet-users-real-web
দীর্ঘদিন ইন্টারনেটের দাম কমানোর দাবিতে আন্দোলনরত Md Rubel Ahmed বলেনঃ
আমরা কখনো সরকারের কাছে ফ্রি ফেসবুক চাই নাই, আমরা সঠিক দামে দেশজুড়ে দ্রুত গতির ইন্টারনেট চাই ।
কাজেই একটা জাতিকে শুধু ফেসবুক ও নাস্তিক মার্কা সংবাদ পত্রের দিকে ঠেলে না দিয়ে।
সকলের জন্য কাজের উপযোগী ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ।
অকর্মা নীতি নির্ধারকদের কেউ বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক না ।
আর যদি তারা মনে করেন আরো বেশী ভোট পেতে সকলের জন্য ফেসবুক নিশ্চিত করতে হবে তাহলে ভিন্ন কথা , তবে দেখবেন হিতে যেন বিপরীত না হয়ে যায় !
সবাই সচেতন হোন ! আমাদের দেশের কল্যাণের জন্য সবাই পোস্ট শেয়ার করুন ও সকল বিদেশী প্রতারক কোম্পানীকে রুখে দেন ।
0 comments:
Post a Comment
প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত যানাতে ভুলবেন না । তবে এমন কিছু মন্তব্য করবেন না যাতে লেখকের মনে আঘাত করে ।